কারক ও বিভক্তি- বাংলা ব্যাকরণ নবম দশম শ্রেণি (karok, bivokti -bangla grammar class 9-10)

কারক-ABC classroom bd




কারক

‘কারক’ শব্দটির অর্থ- যা ক্রিয়া সম্পাদন করে।

বাক্য গঠিত হয় কতগুলো ক্রিয়াপদ ও নামপদের সমন্বয়ে। বাক্যে কোনো পদই এলোমেলোভাবে বসে না। প্রতিটি বিশেষ্য বা সর্বনাম জাতীয় শব্দ বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যের যথাযথ স্থানে বসে অন্বিষ্ট অর্থকে সুস্পষ্ট করে তোলে। বিশেষ্য বা সর্বনাম শব্দের শেষে বিভক্তিযুক্ত হয়ে যে পদ গঠিত হয় তাই নামপদ। ক্রিয়াপদের সাথে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলা হয়।


কারক ছয় প্রকার

১. কর্তৃকারক 

২. কর্ম কারক 

৩. করণ কারক

৪. সম্প্রদান কারক 

৫. অপাদান কারক 

৬. অধিকরণ কারক

 

কারক সম্পর্কের বিশ্লেষণ


ক্রিয়াকে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া যায় তা দিয়েও কারক চেনা যায়।

যেমন: বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের চাল দিতেন। এখানে-

প্রশ্ন

উত্তর

সম্বন্ধ

কে?

বেগম সাহেবা

কর্তৃসম্বন্ধ

কী?

চাল

কর্ম সম্বন্ধ

কী দিয়ে?

নিজ হাতে

করণ সম্বন্ধ

কাদের?

গরিবদের

সম্প্রদান সম্বন্ধ

কোথা থেকে?

ভাঁড়ার থেকে

অপাদান সম্বন্ধ

কখন?

প্রতিদিন

অধিকরণ সম্বন্ধ

 

বিভক্তি


বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য শব্দের সঙ্গে যে সকল বর্ণ যুক্ত হয় তাদের বিভক্তি বলে। যেমন: ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ+এ বিভক্তি), মা (মা+০ বিভক্তি), শিশুকে (শিশু+কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ+০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

·        বিভক্তি চিহ্ন স্পষ্ট না হলে সেখানে শূন্যবিভক্তি আছে মনে করা হয়।

 

বিভক্তি ২ প্রকার।

১. শব্দবিভক্তি বা নামবিভক্তি

২. ক্রিয়াবিভক্তি

 

ক্রিয়াবিভক্তি: 


ক্রিয়াপদের সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাই ক্রিয়া বিভক্তি। যেমন: পড় + তে = পড়তে। ক্রিয়া বিভক্তি কর্তা অনুসারে পরিবর্তিত হয়।

 

বাংলা শব্দবিভক্তি বা নামবিভক্তি


শূন্য বিভক্তি বা অ-বিভক্তি, এ(য়), তে(এ), কে, রে, র, (এরা)- এ কয়টিই খাঁটি বাংলা শব্দবিভক্তি।

এছাড়া বিভক্তি স্থানীয় কয়েকটি অব্যয় শব্দ কারক-সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন: দ্বারা, দিয়ে, হতে, থেকে ইত্যাদি।

বাংলা শব্দবিভক্তি সাত প্রকার:

১. প্রথমা

২. দ্বিতীয়া

৩. তৃতীয়া

৪. চতুর্থী

৫. পঞ্চমী

৬. ষষ্ঠী

৭. সপ্তমী

 

একবচন এবং বহুবচন ভেদে বিভক্তিগুলোর আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। যেমন:

বিভক্তি

একবচন

বহুবচন

প্রথমা

০, অ, এ, (য়)

রা, এরা, গুলি, গণ

দ্বিতীয়া

কে, রে, এরে

দিগে, দিগকে, দিগেরে, দের

তৃতীয়া

দ্বারা, দিয়া/দিয়ে, কর্তৃক      

দিগের দিয়া, দিগের দ্বারা, গুলি কর্তৃক

চতুর্থী

দ্বিতীয়ার মতো

দ্বিতীয়ার মতো

পঞ্চমী

হতে/হইতে, থেকে, চেয়ে  

দিগ হতে, দের হইতে, গুলির চেয়ে, দের থেকে,

ষষ্ঠী

র, এর        

দিগের, দের, গুলির, গণের, গুলোর

সপ্তমী

এ, য়, তে, এতে           

দিগে, দিগেতে, গুলিতে, গণে,

 

বিভক্তিযোগের নিয়ম


১. ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে ‘রা’ যুক্ত হয় না; গুলি, গুলো যুক্ত হয়। যেমন: পাথরগুলো, গরুগুলি

২. অপ্রাণিবাচক শব্দের শেষে ‘কে’ বা ‘রে’ বিভক্তি হয় না, শূন্যবিভক্তি হয়। যেমন: কলম দাও।

৩. স্বরান্ত শব্দের পরে ‘এ’ বিভক্তির রূপ হয়- ‘য়’ বা ‘য়ে’। ‘এ’ স্থানে ‘তে’ বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে। যেমন: মা+এ=মায়ে, পানি+তে=পানিতে।

৪. অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দের পরে প্রায়ই ‘রা’ স্থানে ‘এরা’ হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির ‘র’ স্থলে ‘এর’ যুক্ত হয়। যেমন:   লোক+রা=লোকেরা, বিদ্বান (ব্যঞ্জনান্ত)+রা=বিদ্বানেরা, মানুষ+এর=মানুষের, লোক+এর=লোকের

কিন্তু অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর এক বচনে সাধারণ ‘র’ যুক্ত হয়, ‘এর’ যুক্ত হয় না। যেমন: বড়র, মামার

 

কর্তৃকারক


বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলে।

ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কে’ বা ‘কারা’ যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্তৃকারক। যেমন: খোকা বই পড়ে (কে পড়ে?)। খোকা-কর্তৃকারক। 


কর্তৃকারকের প্রকারভেদ


ক) কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার প্রকারের হয়ে থাকে।

মুখ্য কর্তা   : যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে সে মুখ্য কর্তা। যেমন: ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।

প্রযোজক কর্তা    : মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায় তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন: শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।

প্রযোজ্য কর্তা    : মূল কর্তার করণীয় কার্য  যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলা হয়। ওপরের বাক্যে ‘ছাত্র’ প্রযোজ্য কর্তা। তদ্রুপ- রাখাল (প্রযোজক) গরুকে (প্রযোজ্য কর্তা) ঘাস খাওয়ায়।

ব্যতিহার কর্তা    : কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন: বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।

খ) বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকম হতে পারে। যেমন:

কর্মবাচ্যের কর্তা(কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে)    : পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।

ভাববাচ্যের কর্তা(ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে)    : আমার যাওয়া হবে না।

কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা(বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়)    : বাঁশি বাজে। কলমটা লেখে ভালো।


কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার


বিভক্তির নাম

বিভক্তির চিহ্ন

কর্তৃকারকে প্রয়োগ

প্রথমা

হামিদ বই পড়ে।

রা

যুবকরা গান গাইছে।

দ্বিতীয়া

কে

বশিরকে যেতে হবে।

তৃতীয়া

দ্বারা

আমার দ্বারা এ কাজ হবে না।

কর্তৃক

ফেরদৌসী কর্তৃক শাহনামা রচিত হয়েছে।

পঞ্চমী

হতে

আমা হতে এমন প্রত্যাশ্যা করতে নেই।

ষষ্ঠী

আমার যাওয়া হয়নি।

সপ্তমী

বাঘে-মহিষে খানা একঘাটে খাবে

ঘোড়ায় গাড়ি টানে।

তে

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দিব কীসে?

 

কর্মকারক


যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্মকারক বলে।

কর্ম দুই প্রকার: মুখ্যকর্ম ও গৌণকর্ম। যেমন: বাবা আমাকে (গৌণকর্ম) একটি কলম (মুখ্যকর্ম) কিনে দিয়েছেন।

সাধারণত মুখ্যকর্ম বস্তুবাচক ও গৌণকর্ম প্রাণিবাচক হয়ে থাকে। এছাড়াও সাধারণত কর্মকারকের গৌণকর্মে বিভক্তি যুক্ত হয় আর মুখ্যকর্মে হয় না।


কর্মকারকের প্রকারভেদ


সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম    : নাসিমা ফুল তুলছে।

প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম    : ছেলেটিকে বিছানায় শোয়াও।

সমধাতুজ কর্ম    : বাক্যে কর্ম ও ক্রিয়া একই ধাতু থেকে উপন্ন হলে তাকে বলা হয় সমধাতুজ কর্ম। যেমন:  খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি।

উদ্দেশ্য ও বিধেয় কর্ম    : দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটি পরস্পর অপেক্ষিত কর্মপদ থাকলে প্রধান কর্মটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য কর্ম এবং অপেক্ষিত কর্মটিকে বলা হয় বিধেয় কর্ম। যেমন: দুধকে (উদ্দেশ্য কর্ম) মোরা দুগ্ধ (বিধেয় কর্ম) বলি।

অনুক্ত কর্ম    : সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম উহ্য থাকলে তা অনুক্ত কর্ম। যেমন: ছাত্রেরা আজ (বই) পড়বে না।

**কর্তৃবাচ্যের কর্মকেও অনুক্ত কর্ম বলা হয়। যেমন: রাম রাবনকে হত্যা করেন।

উক্ত কর্ম    : কর্মবাচ্যের কর্মকে বলা হয় উক্ত কর্ম। যেমন: রাম কর্তৃক রাবণ নিহত হন।

অক্ষুণ্ণ কর্ম    : কর্মবাচ্যে দ্বিকর্মক ক্রিয়ার একটি কর্ম অপরিবর্তিত থাকলে তা অক্ষুণ্ণ কর্ম। যেমন: ছাত্রটিকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলো।

বাক্যাংশ কর্ম    : সমাপিকা ক্রিয়াবিহীন বাক্যাংশ বা বাক্যের উপাদান বাক্য বা খন্ডবাক্য বাক্যের কর্মরূপে প্রযুক্ত হলে তাকে বাক্যাংশ কর্ম বা উপবাক্যীয় কর্ম বলে। যেমন: তোমার নাম কী হে?

 

কর্মকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার



বিভক্তির নাম

বিভক্তির চিহ্ন

কর্মকারকে প্রয়োগ

প্রথমা বা শূন্য

তুমি ডাক্তার ডাক।

দ্বিতীয়া

কে

তাকে বল।

রে

আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা।

পঞ্চমী

থেকে

তোমার চেয়ে আমি উত্তম।

চেয়ে

আমি তোমার থেকে এমন প্রত্যাশা করিনি।

ষষ্ঠী

আমি তোমার দেখা পেলাম না।

এর

মোড়ল রহিমের ঘর ভেঙে দিয়েছে।

সপ্তমী

জিজ্ঞাসিব জনে জনে।

আমার তোমায় দেখা পাপ।

 

করণ কারক


‘করণ’ শব্দটির অর্থ যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়। ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, উপকরণ বা সহায়ককেই করণ কারক বলা হয়।

বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘কিসের দ্বারা’ বা ‘কী উপায়ে’ প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় তাই করণ কারক।

যেমন: নীরা কলম দিয়ে লেখে। এখানে উপকরণ-কলম-করণকারক।


করণ কারকের প্রকারভেদ:


যন্ত্রাত্মক করণ    : পার্থিব বস্তু বা ই্ন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু কার্য সম্পাদনের সাধন বা উপায়রূপে ব্যবহৃত হলে তাকে যন্ত্রাত্মক করণ বলে। যেমন: ছুরি দিয়ে সবজি কাটা হয়।

উপায়াত্মক করণ    : পার্থিব বস্তু বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু কাজ সম্পাদনের সাধন বা উপায় না হলে তাকে উপায়াত্মক করণ বলে। যেমন: ব্যায়ামে শরীর গঠন হয়।

হেতুময় করণ    : হেতু বা কারণ অর্থ বোঝাতে হেতুময় করণ হয়। যেমন: আনন্দে তার চোখ ছলছল করছে।

কালাত্মক করণ    : সময় বা কালজ্ঞাপক করণকে বলা হয় কালাত্মক করণ। যেমন: ত্রিশ দিনে এক মাস হয়।

সমধাতুজ করণ    : ক্রিয়াপদটি যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন সেই ধাতু থেকে করণ কারকটিও নিষ্পন্ন হলে তাকে বলা হয় সমধাতুজ করণ। যেমণ: প্রেমের বাধনে বেধেছ আমায়।

লক্ষণাত্মক করণ   : লক্ষণ-প্রকাশন করণকে লক্ষণাক্মক করণ বলা হয়। যেমন: ব্যবহারে ইতর, ভদ্র চেনা যায়।

করণের বীপ্সা    : পোস্টারে পোস্টারে গেয়াল ছয়লাপ।


 করণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার


বিভক্তির নাম

বিভক্তির চিহ্ন

করণকারকে প্রয়োগ

প্রথমা বা শূন্য

ছাত্ররা বল খেলে।

তৃতীয়া

দ্বারা

লাঙ্গল দ্বারা জমি চাষ করা হয়।

দিয়া

মন দিয়া কর সবে বিদ্যা উপার্জন।

পঞ্চমী

হতে

আমা হতে এ কর্ম হবে না সাধন।

ষষ্ঠী

তাঁতের তৈরি কাপড় পরতে আরাম।

এর

জলের লিখন থাকে না।

সপ্তমী

শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায়।

সুতায় কাপড় হয় না।

তে

এত শঠতা, এত যে ব্যথা /তবু যেন তা মধুতে মাখা।

 

সম্প্রদান কারক


যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয় তাকে (সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী) সম্প্রদান কারক বলে। বস্তু নয়-ব্যক্তিই সম্প্রদান কারক। যেমন: ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। তবে স্বত্বত্যাগ করে না দিলে কর্মকারক হবে।


**অনেক বৈয়াকরণ বাংলা ব্যাকরণে সম্প্রদান কারক স্বীকার করেন না, কারণ কর্মকারক দ্বারাই সম্প্রদান কারকের কাজ সুন্দরভাবে সম্পাদন করা যায়।


সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার


বিভক্তির নাম

বিভক্তির চিহ্ন

সম্প্রদান কারকে প্রয়োগ

প্রথমা বা শূন্য

দিব তোমা শ্রদ্ধা-ভক্তি

চতুর্থী

কে

ভিখারিকে ভিক্ষা দাও।

দের

বস্ত্রহীনদের বস্ত্র দাও।

ষষ্ঠী

এ যে দেবতার ধন।

এর

দেশের জন্য প্রাণ দাও।

সপ্তমী

পাত্রে কন্যা দান কর।

তোমায় আমার সালাম।

তে

সমিতিতে চাঁদা দাও।


অপাদান কারক


যা থেকে কিছু বিচ্যুত, গৃহীত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয় তাকেই অপাদান কারক বলে। ক্রিয়াকে কোথা থেকে প্রশ্ন করলে অপাদান কারক পাওয়া যায়।


অপাদান কারকের প্রকারভেদ


স্থানবাচক অপাদান    : তিনি খুলনা থেকে এসেছেন

কালবাচক অপাদান    : আজ সকাল থেকেই এক নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে।

দূরত্ববাচক অপাদান    : ঢাকা থেকে ষোল কিলোমিটার দূরেই নারায়ণঞ্জ।

অবস্থানবাচক অপাদান    : বারান্দা থেকে দেখলাম সে আসছে।

তারতম্যবাচক অপাদান    : রহিমের চেয়ে করিম অনেক বুদ্ধিমান।


অর্থভেদে অপাদান কারক



বিচ্যুত

 গাছ থেকে পাতা পড়ে।

গৃহীত

 সুক্তি থেকে মুক্তো মেলে।

জাত

 জমি থেকে ফসল পাই।

বিরত

 পাপে বিরত হও।

দূরীভূত

 দেশ থেকে পঙ্গপাল চলে গেছে।

রক্ষিত

 বিপদ থেকে বাঁচাও।

আরম্ভ

 সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু।

ভীত

 বাঘকে ভয় পায় না কে?

অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তি ছাড়াও হইতে, হতে, থেকে, দিয়া, দিয়ে ইত্যাদি অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়।


অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ



বিভক্তির নাম

বিভক্তির চিহ্ন

অপাদান কারকে প্রয়োগ

প্রথমা বা শূন্য

বোঁটা-আলগা ফল গাছে থাকে না।

দ্বিতীয়া

কে

বাবাকে বড্ড ভয় পাই।

তৃতীয়া

দিয়ে

মুখ দিয়ে রক্ত পড়েছে।

পঞ্চমী

হতে

ধন হতে মান বড়।

থেকে

মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়।

ষষ্ঠী

চোরের ভয়ে ঘুম আসে না।

এর

যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধে হয়।

সপ্তমী

বিপদে মোরে করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা।

টাকায় টাকা হয়।

 

অধিকরণ কারক


ক্রিয়া সম্পাদনের কাল (সময়) এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অধিকরণ কারকে সপ্তমী অর্থা ‘এ’ ‘য়’ ‘তে’ ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়। কখন, কোথায়, কোন বিয়য়ে, কীসে দিয়ে প্রশ্ন করলে অধিকরণ কারক পাওয়া যায়। যেমন:

আধার (স্থান): আমরা রোজ স্কুলে যাই।

কাল (সময়): প্রভাতে সূর্য ওঠে।


প্রকারভেদ


অধিকরণ কারক তিন প্রকার। যেমন:

১. কালাধিকরণ

২. আধারাধিকরণ  

৩. ভাবাধিকরণ

কালাধিকরণ: যে কালে বা সময়ে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় সেই কালজ্ঞাপক অধিকরণকে কালাধিকরণ বলে। যেমন: আমি দুপুরে তাকে কলেজে দেখেছি।

কালাধিকরণ দুই প্রকার।

১.মুহূর্তাধিকরণ: সময়ের নির্দিষ্ট মুহূর্তজ্ঞাপক অধিকরণকে বলা হয় মুহূর্তাধিকরণ। যেমন: বেলা দশটায় বাজার খোলে।

২.ব্যাপ্তাধিকরণ: ক্রিয়ার কাল বিস্তৃত অধিকরণকে বলা হয় ব্যাপ্তাধিকরণ। যেমন: বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়।

আধারাধিকরণ: যে স্থানে ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাই আধারাধিকরণ। যেমন: গাড়ি ঢাকায় পৌছাল।

আধারাধিকরণ তিন প্রকার।

১. ঐকদেশিক: বিশাল স্থানের যে কোনো অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। যেমন: পুকুরে মাছ আছে (পুকুরের যে কোনো একস্থানে)।

সামীপ্য অর্থেও ঐকদেশিক আধারাধিকরণ হয়। যেমন: ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে(ঘাটের কাছে)।

২. অভিব্যাপক: উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে, তবে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে। যেমন: তিলে তৈল আছে। (তিলের সারা অংশব্যাপী)।

৩. বৈষয়িক: বিষয় বিশেষে বা কোনো বিশেষ গুণে কারও কোনো দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে সেখানে বৈষয়িক অধারাধিকরণ হয়। যেমন: রাকিব অঙ্কে কাঁচা কিন্তু ব্যাকরণে ভালো।

ভাবাধিকরণ: যদি কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনোরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তবে তাকে ভাবাধিকরণ বলে। ভাবাধিকরণে সর্বদাই সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ হয় বলে একে ভাবে সপ্তমী বলা হয়। যেমন: সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।


অধিকরণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তি



বিভক্তির নাম

বিভক্তির চিহ্ন

অধিকরণ কারকে প্রয়োগ

প্রথমা বা শূন্য

আমি ঢাকা যাব।

দ্বিতীয়া

কে

আজকে আমি যাব।

তৃতীয়া

দিয়ে

খিলিপান (এর ভিতরে) দিয়ে ওষুধ খাবে।

পঞ্চমী

হতে

প্রাসাদ হতে তোমাকে ডেকেছিলাম।

থেকে

বাড়ি থেকে নদী দেখা যায়।

ষষ্ঠী

নদীর মাছ খেতে মজা।

এর

কপালের লিখন যায় না খন্ডন।

সপ্তমী

আমরা বিকালে বেড়াতে যাব।

তারা ঢাকায় গেলেন।

তে

বাড়িতে কেউ নাই।

 

অধিকরণে অনুসর্গের ব্যবহার


ঘরের মধ্যে কে রে? তোমার আসন পাতিব হাটের মাঝে্?

 

 

Post a Comment

0 Comments