বাচ্য-ABC classroom bd

Shortcuts



বাচ্য


ক্রিয়ার যে রূপভেদে মাধ্যমে বাক্যস্থিত কর্তা ও কর্মের সঙ্গে তার সম্বন্ধ সূচিত হয় অথবা ঐ দুয়ের কারও সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ সূচিত না হয়ে কেবল ক্রিয়ার কাজটুকুই সূচিত হতে দেখা যায়, এ রূপভেদকেই ক্রিয়ার বাচ্য বলা হয়।
১. রবীন্দ্রনাথ ‘গীতাঞ্জলি’ লিখেছেন।
২. রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক ‘গীতাঞ্জলি’ লিখিত হয়েছে।
৩. আমার খাওয়া হলো না।
ওপরের প্রথম বাক্যে কর্তার, দ্বিতীয় বাক্যে কর্ম, তৃতীয় বাক্যে ক্রিয়ার প্রাধান্য রয়েছে। বাক্যের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় ‘বাচ্য’।

বাচ্য প্রকরণ

বাচ্য প্রধানত তিন প্রকার। যেমন :
১. কর্তৃবাচ্য
২. কর্মবাচ্য
৩. ভাববাচ্য
এছাড়াও আরেকটি বাচ্য রয়েছে। কর্মকর্তৃবাচ্য

কর্তৃবাচ্য


যে বাক্যে কর্তার অর্থপ্রাধান্য রক্ষিত হয় এবং ক্রিয়াপদ কর্তার অনুসারী হয় তাকে কর্তৃবাচ্যের বাক্য বলে। যেমন : ছাত্ররা অঙ্ক করছে।

১. কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়াপদ সর্বদাই কর্তার অনুসারী হয়।
২. কর্তৃবাচ্যে কর্তায় প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি এবং কর্মে দ্বিতীয়া, ষষ্ঠী বা শূন্য বিভক্তি হয়।
   যেমন : শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান।
        রোগী পথ্য সেবন করে।
৩. কর্মের ভূমিকা গৌণ।
৪. ক্রিয়া অকর্মক, দ্বিকর্মক, সমর্মকও হতে পারে।
৫. কর্তার পুরুষ ও বচন অনুযায়ী তার ক্রিয়া গঠিত হয়।

কর্মবাচ্য


যে বাক্যে কর্মের সাথে ক্রিয়ার সম্বন্ধ প্রধানভাবে প্রকাশিত হয় তাকে কর্মবাচ্য বলে। 
যেমন     : শিকারি কর্তৃক ব্যাঘ্র নিহত হয়েছে।

১. কর্মবাচ্যে কর্মে প্রথমা, কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি ও দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক অনুসর্গের ব্যবহার এবং ক্রিয়াপদ কর্মের অনুসারী হয়।
    যেমন     : আলেকজাণ্ডার কর্তৃক পারস্য দেশ বিজিত হয়। চোরটা ধরা পড়েছে।
২. কখনো কখনো কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি হতে পারে।
    যেমন    : আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে।
৩. অকর্মক ক্রিয়ার কর্মবাচ্য হয় না।

ভাববাচ্য


যে বাচ্যে কর্ম থাকে না এবং বাক্যে ক্রিয়ার অর্থই বিশেষভাবে ব্যক্ত হয় তাকে ভাববাচ্য বলে।

১. ভাববাচ্যের ক্রিয়া সর্বদাই নাম পুরুষের হয়। ভাববাচ্যের কর্তায় ষষ্ঠী, দ্বিতীয়া অথবা তৃতীয়া বিভক্তি প্রযুক্ত হয়। 
যেমন:
    ক) আমার(কর্তায় ষষ্ঠী) খাওয়া হলো না।               (নাম পুরুষের ক্রিয়া)
    খ) আমাকে(কর্তায় দ্বিতীয়া) এখন যেতে হবে।           (নাম পুরুষের ক্রিয়া)
    গ) তোমার দ্বারা(কর্তায় তৃতীয়া) এ কাজ হবে না।     (নাম পুরুষের ক্রিয়া)
২. কখনো কখনো ভাববাচ্যে কর্তা উহ্য থাকে, কর্ম দ্বারাই ভাববাচ্য গঠিত হয়।
     যেমন : এ পথে চলা যায় না। এবার ট্রেনে ওঠা যাক। 
          : কোথা থেকে আসা হচ্ছে?
৩. মূল ক্রিয়ার সংযোগ ও বিভিন্ন অর্থে ভাববাচ্যের ক্রিয়া গঠিত হয়। 
    যেমন  :  এ ব্যাপারে আমাকে দায়ী করা চলে না। 
          : এ রাস্তা আমার চেনা নেই।

কর্মকর্তৃবাচ্য


যে বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয় হয়ে বাক্য গঠন করে তাকে কর্মকর্তৃবাচ্যের বাক্য বলা হয়।
    যেমন : কাজটা ভালো দেখায় না। 
          : বাঁশি বাজে এ মধুর লগনে। 
          : সুতি কাপড় অনেক দিন টেকে।

বাচ্য পরিবর্তন


কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য


নিয়ম : কর্তৃবাচ্যের বাক্যকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে-
    ১. কর্তায় তৃতীয়া 
    ২. কর্মে প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি 
    ৩. ক্রিয়া কর্মের অনুসারী হয়।
            কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়া অকর্মক হলে সেই বাক্যের কর্মবাচ্য হয় না।
         কর্তৃবাচ্য                 
           কর্মবাচ্য
বিদ্বানকে সকলেই আদর করে
বিদ্বান সকলের দ্বারা আদৃত হন
খোদাতায়ালা বিশ্বজগ সৃষ্টি করেছেন
বিশ্বজগ খোদাতায়ালা কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে
মুবারক পুস্তক পাঠ করছে
মুবারক কর্তৃক পুস্তক পঠিত হচ্ছে
    লক্ষণীয়: কর্তৃবাচ্যে ব্যবহৃত তসম মিশ্রক্রিয়াটি কর্মবাচ্যে যৌগিক ক্রিয়াজাত ক্রিয়াবিশেষণ     রূপে ব্যবহৃত হয়।

কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্য


নিয়ম : কর্তৃবাচ্যের বাক্যকে ভাববাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে-
    ১. কর্তায় ষষ্ঠী বা দ্বিতীয়া বিভক্তি হয় 
    ২. ক্রিয়া নাম পুরুষের হয়।
    যেমন:
           কর্তৃবাচ্য
               ভাববাচ্য
আমি যাব না
আমার যাওয়া হবে না
তুমিই ঢাকা যাবে
তোমাকেই ঢাকা যেতে হবে
তোমরা কখন এলে?
তোমাদের কখন আসা হলো?



কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্য

    
    নিয়ম : কর্মবাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে-
    ১. কর্তায় প্রথমা, কর্মে দ্বিতীয়া বা শূন্য বিভক্তি প্রযুক্ত হয় 
    ২. ক্রিয়া কর্তা অনুযায়ী হয়।
    যেমন:
            কর্মবাচ্য
          কর্তৃবাচ্য
দস্যুদল কর্তৃক গৃহটি লুন্ঠিত হয়েছে
দস্যুদল গৃহটি লুন্ঠন করেছে
হালাকু খাঁ কর্তৃক বাগদাদ বিধ্বস্ত হয়
হালাকু খাঁ বাগদাদ ধ্বংস করেন



ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্য


    নিয়ম : ভাববাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে-
    ১. কর্তায় প্রথমা বিভক্তি প্রযুক্ত হয়
    ২. ক্রিয়া কর্তার অনুসারী হয়। 
    যেমন:
      ভাববাচ্য  
          কর্তৃবাচ্য
তোমাকে হাঁটতে হবে
তুমি হাঁটবে
এবার একটি গান করা হোক
এবার(তুমি) একটি গান কর
তার যেন আসা হয়
সে যেন আসে